ঢাকা,শনিবার, ১৮ মে ২০২৪

চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত, ঘূর্ণিঝড় ‘তিতলি’র প্রভাবে

ভারি বর্ষণ ও প্রবল জোয়ারে তলিয়ে গেছে চট্টগ্রামের নিচু এলাকা। ছবিটি শুক্রবার আগ্রাবাদের সিডিএ এলাকা থেকে তোলা

অনলাইন ডেস্ক ::

ঘূর্ণিঝড় ‘তিতলি’র প্রভাবে টানা বৃষ্টি ও জোয়ারের পানিতে চট্টগ্রাম এবং কক্সবাজারের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। বাসা-বাড়ি, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, মসজিদ ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পানি ঢুকে পড়েছে। এতে সীমাহীন দুর্ভোগে পড়েছেন লাখো মানুষ। বৃষ্টিতে পাহাড় ধসের আশঙ্কায় ঝুঁকিপূর্ণভাবে বসবাসকারী ১২ পরিবারকে একটি আশ্রয় কেন্দ্রে সরিয়ে নিয়েছে প্রশাসন।

এদিকে আবহাওয়া অধিদফতর জানিয়েছে, ‘তিতলি’র প্রভাবে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে আজও বৃষ্টি হতে পারে। এ ছাড়া দেশের উপকূলীয় এলাকা ও সমুদ্রবন্দরগুলোর ওপর দিয়ে ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে। এজন্য চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রা বন্দরকে ৩ নম্বর সতর্কসংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে।

আবহাওয়া অধিদফতরের বিশেষ বুলেটিনে জানানো হয়, শুক্রবার সকাল ৬টায় ভারতের ওড়িষা ও সংলগ্ন উপকূলীয় এলাকায় অবস্থান করছিল ‘তিতলি’। এটি আরও উত্তর-পূর্বদিকে অগ্রসর হয়ে ক্রমশ দুর্বল হতে পারে। উত্তর বঙ্গোপসাগর ও গভীর সাগরে অবস্থানরত সব মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে বলা হয়েছে।

একই সঙ্গে আবহাওয়ার পূর্বাভাসে জানানো হয়, ঢাকা, ময়মনসিংহ, রংপুর, রাজশাহী, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের অধিকাংশ জায়গায় অস্থায়ী দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি অথবা বজ সহ বৃষ্টি হতে পারে। সেই সঙ্গে দেশের কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারি থেকে অতিভারি বর্ষণ হতে পারে। সারা দেশে দিন ও রাতের তাপমাত্রা সামান্য হ্রাস পেতে পারে।

ব্যুরো ও প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর-

চট্টগ্রাম : শুক্রবার ভোর থেকে টানা বৃষ্টি ও জোয়ারের পানিতে নিম্নাঞ্চলের অনেক এলাকা তলিয়ে যায় হাঁটু থেকে কোমরসমান পানিতে। ওইসব এলাকার বাসা-বাড়ি, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও মসজিদে পানি ঢুকে পড়েছে। বিশেষ করে নগরীর আগ্রাবাদ, সিডিএ আবাসিক এলাকা, বড়পোল, ছোটপোল, এক্সেসরোড, বেপারি পাড়া, মুহুরী পাড়া, শান্তিবাগ আবাসিক এলাকা, চকবাজার, বাদুরতলা, কাপাসগোলা, বহদ্দারহাট, বাকলিয়া, নিমতলাসহ নগরীর বিভিন্ন এলাকায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে।

স্থানীয়দের অভিযোগ, নগরীর অধিকাংশ সড়কের পাশের নালা-নর্দমা সংস্কার ও সম্প্রসারণ কাজ চলছে। এ কাজ যথাযথভাবে সম্পন্ন না করায় অধিকাংশ নালা নর্দমা ভরাট হয়ে যায়। ফলে বৃষ্টিতে নিম্নাঞ্চলে জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। সাপ্তাহিক ছুটির দিন হওয়ায় স্কুল-কলেজগামী শিক্ষার্থী ও অভিভাবক এবং কর্মস্থলগামী মানুষের দুর্ভোগ ছিল না। তবে দুর্ভোগে পড়েছেন দিন মজুর, শ্রমিক ও নিু আয়ের মানুষ।

নগরীর চকবাজার এলাকার বাসিন্দা নূরজাহান বেগম জানান, বৃহস্পতিবার রাতে তার ঘরে পানি ঢুকে পড়ায় খাটের ওপর বসে পরিবারের সবাইকে রাত কাটাতে হয়েছে। খেতে হয়েছে শুকনো খাবার।

সিডিএ আবাসিক এলাকার বাসিন্দা মো. আবু সুফিয়ান বলেন, জলাবদ্ধতার কারণে অনেকে জুমার নামাজ আদায় করতে মসজিদে যেতে পারেননি। ময়লা-আবর্জনা পানি দিয়ে হাঁটা চলা করতে হচ্ছে।

পতেঙ্গা আবহাওয়া অফিসের সহকারী আবহাওয়াবিদ আবদুল হান্নান বলেন, বৃহস্পতিবার বিকেল ৩টা থেকে শুক্রবার বিকেল ৩টা পর্যন্ত ৭৬ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। শনিবার (আজ) চট্টগ্রাম বিভাগে অতিভারি (৮৯ মিমি’র বেশি) বর্ষণ হতে পারে।

এদিকে টানা বৃষ্টিতে পাহাড় ধসের আশঙ্কায় ঝুঁকিপূর্ণভাবে বসবাসকারী ১২ পরিবারকে সরিয়ে নিয়েছে জেলা প্রশাসন। শুক্রবার সকাল ১১টা থেকে বিকেল সাড়ে ৫টা পর্যন্ত নগরীর লালখান বাজার পোড়া কলোনি এলাকা থেকে এসব পরিবারকে সরিয়ে নেয়া হয়। অভিযানে নেতৃত্ব দেয়া নগরীর পতেঙ্গা সার্কেলের সহকারী কমিশনার (ভূমি) তাহমিলুর রহমান বলেন, তাদের লালখান বাজার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে জরুরি আশ্রয় কেন্দ্রে অস্থায়ীভাবে থাকতে দেয়া হয়েছে। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাদের শুকনো খাবার সরবরাহ করা হয়েছে।

কক্সবাজার : মহেশখালীর ধলঘাটা, টেকনাফের সেন্টমার্টিন ও শাহপরীর দ্বীপ, কুতুবদিয়ার দক্ষিণ ধুরুং, উত্তর ধুরুং তবেলারচর, চকরিয়ার মাতামহুরীসহ কক্সবাজার শহরের সমিতি পাড়া, চরপাড়া ও সদর উপজেলার বিভিন্ন এলাকা প্লাবিত হয়েছে। এসব এলাকার অর্ধশত গ্রামে পানি উঠেছে। আমন ও আগাম শীতকালীন সবজির বীজতলাসহ প্রায় শতাধিক হেক্টর জমির ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।

টেকনাফে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শনে যান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ রবিউল হাসান ও সহকারী কমিশনার ভূমি প্রণয় চাকমা। পরে তারা সাংবাদিকদের বলেন, শাহপরীর দ্বীপের ভাঙন এলাকার ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা তৈরি করতে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের বলা হয়েছে। পাশাপাশি প্লাবনের শিকার হয়ে যেসব পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তাদের প্রশাসনের পক্ষ থেকে সার্বিক সহযোগিতা করা হবে।

টেকনাফ সাবরাং ইউনিয়নের ব্যবসায়ী নুরুল আলম জানান, বৃষ্টির পাশাপাশি জোয়ারে ৩-৪ ফুট পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় সেন্টমার্টিন ও শাহপরীর দ্বীপে ১০-১২টি গ্রামে পানি উঠেছে।

সাবরাং ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নূর হোসেন বলেন, শতাধিক বসতবাড়ি পানির নিচে রয়েছে। আবার অনেক এলাকা সাগরে বিলীন হয়ে গেছে।

কুতুবদিয়া উপজেলার দক্ষিণ ধুরুং ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আলাউদ্দিন আল আজাদ জানান, উপজেলার তাবলেরচর, উত্তর ধুরুং, দক্ষিণ ধুরুং, আলী আকবর ডেইলসহ আরও একাধিক ইউনিয়নের মানুষ প্লাবনের শিকার হয়ে চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন।

কুতুবদিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ আশিক জামিল মাহমুদ বলেন, জোয়ারে উপকূলের নিম্নাঞ্চল সাগরের নোনা জলে প্লাবিত হওয়ায় ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।

কুতুবদিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মনোয়ারা বেগম বলেন, কুতুবদিয়া উপকূল রক্ষা বেড়িবাঁধের ২১ কিলোমিটার ভাঙা। ফলে জোয়ারের পানি লোকালয়ে ঢুকে পড়েছে।

পাঠকের মতামত: